কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত বিএনপির ৯ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অভিযোগ করেছেন, গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মীদের চোখ ও হাত-পা বেঁধে শারীরিক নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। সাবেক এমপি-মন্ত্রীসহ বিএনপির সিনিয়র অনেক নেতৃবৃন্দ অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাদের নিষিদ্ধ সন্ত্রাসীদের মতো ৫-৭ দিন করে রিমান্ডে নির্যাতন করা হচ্ছে।

রোববার (২৮ জুলাই) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, “গ্রেপ্তারকৃত সাবেক এমপি, মন্ত্রীসহ বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাদের নিষিদ্ধ সন্ত্রাসীদের মতো ৫-৭ দিন করে রিমান্ডে নির্যাতন করা হচ্ছে। সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাইফুল আলম নীরব, আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনুসহ অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। নির্মমভাবে চোখ ও হাত-পা বেঁধে শারীরিক নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায়ের নিরন্তর চেষ্টা চলছে।”

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আদালতকে অবহিত করার পরেও আদালত সরকারপ্রধানের ইশারায় তাদের রিমান্ড অব্যাহত রেখেছে। তাদের শারীরিক সুস্থতা নিয়ে দেশবাসী শঙ্কিত। তাদের ওপর চলমান নির্যাতনে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হলে এর দায় সরকার এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেই নিতে হবে। জেলখানার ভেতরেও নেতা-কর্মীদেরকে নির্মম নির্যাতনের মধ্যে রাখা হয়েছে, যা অত্যন্ত অমানবিক এবং আইনের পরিপন্থী। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন মানবতাবিরোধী অপরাধ।

তিনি আরও বলেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলনকে নিয়ে সরকার দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করছে। একদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- নিরীহ ছাত্র-ছাত্রী এবং কোটা সংস্কারের নেতাদেরকে নির্যাতন করা হবে না, অপরদিকে প্রতিনিয়ত সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে গ্রেপ্তার অব্যাহত রাখা হয়েছে। সাধারণ মানুষ, প্রতিবন্ধী শিশু এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার এমনকি চাকরিজীবীরা পর্যন্ত এ ধরনের অমানবিক কর্মকাণ্ড থেকে রেহাই পাচ্ছে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যারা প্রকাশ্যে সাধারণ ছাত্রদের বুকে গুলি চালিয়ে হত্যা করলো, তাদের একজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি। বরঞ্চ তাদের নিয়ে সরকারপ্রধান মায়াকান্না করছে।”

বিএনপির সিনিয়র এই নেতা আরও বলেন, “দেশটা আজকে ত্রাসের রাজ্যে পরিণত করেছে। দিন দিন নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে হত্যার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সরকার যতই ছলচাতুরী করুক না কেন গণদাবির কাছে পদত্যাগ করতেই হবে। মানুষ যখন প্রতিবাদ শুরু করেছে এই প্রতিবাদের ধারা অব্যাহত থাকবে। সরকার এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছে- গুলি করে মানুষকে হত্যা করা হয়নি, অথচ শিশু আহাদ, সামীর থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ পথচারী সকলেই গুলিতে নিহত হয়েছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “বিভিন্ন সূত্রে ইতোমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি হত্যার সংখ্যা অনেক লম্বা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে দুষ্কৃতিকারীদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি স্থাপনাগুলোর বর্ণনা দেওয়া হলেও কোটাবিরোধী আন্দোলনে মৃত্যুর তালিকা এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। মৃত্যুকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই মৃত্যুর তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না। তাছাড়া সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এবং সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার বাণিজ্য অব্যাহত রাখা হয়েছে।”